উক্ত অবস্থায় যরূরী প্রয়োজনে মুছল্লীর সিজদার স্থানের বাহির দিয়ে অতিক্রম করা যাবে (বুখারী হা/৫০৯, মুসলিম হা/৫০৫)। উক্ত হাদীছে بين يدي المصلي দ্বারা মুছল্লীর সিজদার স্থান পর্যন্ত বুঝানো হয়েছে (ইবনু হাজার, ফৎহুলবারী ঐ হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ; ফাতাওয়া ওছায়মীন, মাসআলা নং ৬২৪)। মসজিদ ছাড়া অন্যত্র একাকী ছালাত আদায়কারী মুছল্লী সামনে সুতরা রেখে ছালাত আদায় করবেন (আবুদাঊদ হা/৬৯৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪১)। যদি সুতরা না রেখে ছালাত আদায় করেন, তবে তার সিজদার স্থান পর্যন্ত জায়গার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা যাবে না (বুখারী হা/৫১০; মুসলিম হা/৫০৭; মিশকাত হা/৭৭৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ কোন বস্ত্তকে সম্মুখে রেখে ছালাত আদায় করবে যা তাকে লোকদের থেকে সুৎরা বা পর্দা স্বরূপ হবে, এমন অবস্থায় তার সম্মুখ থেকে যদি কেউ অতিক্রম করতে চায়, তাহ’লে সে যেন তাকে বাধা দেয়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৭৭ ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য; মির‘আতুল মাফাতীহ হা/৭৮৬-এর ব্যাখ্যা; উছায়মীন, আরকানুল ইসলাম ২/৪৯৩ পৃঃ, প্রশ্নোত্তর সংখ্যা ২৬৭)।
জাওনিয়ার সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর বিবাহ হয়েছিল কি? তিনি কেন তাকে তালাক দিয়েছিলেন?
জাওনিয়ার (الجونية) সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর বিবাহ ও তালাকের ব্যাপারে আয়েশা (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীছটিই যথেষ্ট। যেখানে তিনি বলেন, জাওনের কন্যাকে যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট (একটি ঘরে) পাঠানো হ’ল। আর তিনি তার নিকটবর্তী হ’লেন, তখন সে বলল, আমি আপনার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি তো মহান সত্তার কাছে পানাহ চেয়েছ। অতএব তুমি তোমার পরিবারের সাথে মিলিত হও (বুখারী হা/৫২৫৪)। অতএব জাওনিয়া বিবাহের পর রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বসবাসে অস্বীকৃতি জানালে তিনি তাকে তালাক প্রদান করেন (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : ফাৎহুলবারী, উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা)।
সরকারী চাকুরীর বয়স কম হওয়ায় ভবিষ্যতে চাকুরীর সময়কাল বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য সার্টিফিকেটে বয়স কম দেখানোয় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি? অনিচ্ছাকৃত বা না জানার কারণে এরূপ হয়ে গেলে তার জন্য করণীয় কি?
এরূপ কাজ শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ এটি প্রতারণা এবং মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত, যা নিঃসন্দেহে হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তিু প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয় (মুসলিম হা/১০১; মিশকাত হা/৩৫২০)। এক্ষণে এরূপ কাজ করে থাকলে এবং তা পরিবর্তন করা সম্ভব না হ’লে, এজন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
পুরুষের পক্ষ থেকে কোন নারী বদলী হজ্জ পালন করতে পারবে কি?
মুসলিম নারী যেকোন মুসলিম পুরুষের পক্ষ থেকে হজ্জ করতে পারে। বিদায় হজ্জের সময় খাছ‘আম গোত্রের জনৈক মহিলা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে তার অতি বৃদ্ধ পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ করার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫১১)। তবে ঐ মহিলার সাথে মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে।
আমরা আলেমদের নিকটে শুনেছি যে, ছিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি হ’লে তা ফিৎরা আদায়ের মাধ্যমে কাফফারা হয়ে যায়। এক্ষণে শিশুরা ছিয়াম পালন না করলেও তাদের জন্য ফিৎরা আদায়ের আবশ্যকতার কারণ কি?
ছিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য ফিৎরা যে কাফফারা তা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন (আবুদাঊদ মিশকাত হা/১৮১৭)। আর ছোট-বড় সকল মুসলিমকে ফিৎরা দিতে হবে এ কথাও রাসূল (ছাঃ) বলেছেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮১৫)। আলী (রাঃ) বলেন, ‘যদি দ্বীন মানুষের রায় অনুযায়ী হ’ত, তাহ’লে মোযার নীচে মাসাহ করা অধিক উত্তম হ’ত উপরে মাসাহ করার চাইতে’ (আবুদাঊদ হা/১৬২, সনদ ছহীহ)। অতএব যুক্তি নয় বরং রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ অনুসরণের মধ্যেই পরকালীন মুক্তি নিহিত।
ইয়াজূজ-মাজূজ কারা? এদের উৎপত্তি কোথায়? কিয়ামতের কতদিন পূর্বে এরা বের হবে এবং কি কি করবে? কিভাবে এরা ধ্বংস হবে?
ইয়াজূজ-মাজূজ পৃথক কোন সম্প্রদায় নয়, বরং তারা আদম (আঃ)-এর বংশধর (বুখারী হা/৪৭৪১ মুসলিম হা/২২২)। মানুষের ঈমান পরীক্ষা করার জন্য এদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা পৃথিবীতে কখন ও কিভাবে আগমন করেছে, এ বিষয়ে বিদ্বানদের মাঝে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তবে তারা অবশ্যই আদম সন্তান ছিল এবং হযরত নূহ (আঃ)-এর পরে পৃথিবীতে তাদের আগমন ঘটেছিল (ফাৎহুল বারী ১৩/১৩১ পৃঃ; ‘ইয়াজূজ মাজূজ’ অধ্যায়)। বর্তমানে যুলক্বারনাইন নির্মিত প্রাচীর দ্বারা তারা আবেষ্টিত রয়েছে (কাহফ ১৮/৯৪-৯৮)।
এ দু’জাতির বেরিয়ে আসাটা ক্বিয়ামতের দশটি বড় আলামতের একটি (মুসলিম হা/২৮৮০; তিরমিযী হা/২১৮৩; আবুদাউদ হা/৪৩১১)। ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে তাদের বংশধররা আল্লাহর হুকুমে প্রাচীর ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে। তারা সামনে যা পাবে সব খেয়ে ফেলবে। তাদের সাথে কেউ লড়াই করতে সাহস পাবে না। তারা বহু লোককে হত্যা করবে। সমুদ্রের পানি পান করে শেষ করবে। এক সময় বায়তুল মুক্বাদ্দাসের এক পাহাড়ে উঠে তারা হুংকার দিয়ে বলবে, দুনিয়াতে যারা ছিল সব শেষ করেছি, এখন আসমানে যারা আছে তাদের শেষ করব। এই বলে তারা আকাশে তীর ছুঁড়তে থাকবে। আল্লাহ তাদের তীরে রক্ত মাখিয়ে ফেরত পাঠাবেন। এক সময় ঈসা (আঃ) তাদের জন্য বদদো‘আ করবেন। তাতে তারা সবাই একযোগে মারা পড়বে ও লাশ সমূহ পচে দুর্গন্ধ হবে। আল্লাহ তখন শকুন পাঠাবেন। তারা লাশগুলিকে ‘নাহবাল’ নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। মুসলমানেরা তাদের তীর-ধনুকগুলি সাত বছর ধরে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭৫)।
জন্মগতভাবে হিজড়াদের ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান কি? তারা শরী‘আত অনুযায়ী সকল বিধি-বিধান মেনে চললে কি তারা জান্নাতে যেতে পারবে?
জন্মগত হিজড়ারা যদি বিবেকসম্পন্ন হয়, তাহ’লে তাদের উপরে ইসলামের বিধি-বিধান অপরিহার্য। তা পালন করলে তারাও জান্নাতে যাবে ইনশাআল্লাহ। তাই সমাজের একজন সদস্য হিসাবে তাদেরকে ইসলামী জীবন যাপন করতে হবে। লজ্জাস্থান ও শারীরিক গঠন বিবেচনায় তার উপর নারী বা পুরুষের বিধান প্রযোজ্য হবে। আলী (রাঃ) এই বিবেচনাতেই তাদের জন্য সম্পদের অংশ নির্ধারণ করতেন (ইবনু হাজার, তালখীছুল হাবীর হা/১৭২, সনদ ছহীহ)। স্মর্তব্য যে, জন্মগতভাবে হিজড়াদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা অনুচিত। বরং চিকিৎসার মাধ্যমে তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ নারী বা পুরুষে পরিণত করা যেতে পারে।
আমাদের এলাকার ইমাম ছাহেব একই বৈঠকে জনৈক ব্যক্তিকে দিয়ে তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করান। অতঃপর ঐ বৈঠকেই উক্ত মহিলাকে অপর এক পুরুষের সাথে বিবাহ দেন। উক্ত তালাক ও বিবাহ সঠিক হয়েছে কি?
উক্ত তালাক ও বিবাহ দু’টিই শরী‘আতের দৃষ্টিতে অবৈধ হয়েছে। প্রথমতঃ একসাথে তিন তালাক দিলে সেটি এক তালাক হিসাবে গণ্য হবে (মুসলিম হা/১৪৭২-৭৩; আবুদাঊদ হা/২১৯৬, সনদ হাসান)। কেননা তালাকের সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে পৃথক পৃথকভাবে তিন তুহুরে তিনবার তালাক দেওয়া (বাক্বারাহ ২/২২৯; তালাক্ব ৬৫/১-২)। দ্বিতীয়তঃ সঠিকভাবে তালাক সম্পন্নের পর ইদ্দত শেষে উক্ত মহিলা অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে (বাক্বারাহ ২/২২৮)। ইদ্দতের মধ্যে বিবাহের কোন সুযোগ নেই।
জুম‘আর ছালাতের খুৎবা শুরুর পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করার পর আযান শুরু হয়ে গেলে আযান শোনা ও তার জবাব দেওয়া যরূরী, নাকি আযান চলাকালীন অবস্থায় সুন্নাত ছালাত আদায়ই যরূরী হবে?
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন আযান শুনবে, তখন মুওয়াযযিন যা বলে তোমরাও তা বল’ (বুখারী হা/৬১১; মুসলিম হা/৩৮৩)। অতএব আযানের জবাব দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার পর বসে খুৎবা শ্রবণ করাই উত্তম হবে (ইবনু কুদামা, মুগনী ১/৩১১)। আদবের স্বার্থে উক্ত ছালাত খত্বীবের সামনে না পড়ে বারান্দায় পড়ে ভিতরে গিয়ে বসা ভাল হবে।
স্ত্রীর জীবদ্দশায় যদি স্বামী মোহরানা পরিশোধ না করেন, তাহ’লে তার মৃত্যুর পর তা পরিশোধ করতে হবে কি?
স্বামীর জন্য ফরয কর্তব্য হ’ল স্ত্রীর জীবদ্দশায় মোহরানা পরিশোধ করা (নিসা ৪, মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩১৪৩)। জীবদ্দশায় তা পরিশোধ করা না হ’লে মৃত্যুর পর স্ত্রীর ওয়ারিছদের মধ্যে মোহরানার অর্থ বণ্টন করে দিতে হবে। অতঃপর স্বামী অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অজ্ঞতাবশে কোন মন্দ কাজ করে, অতঃপর যদি সে তওবা করে ও নিজেকে সংশোধন করে নেয়, তবে তিনি (তার ব্যাপারে) ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আন’আম ৬/৫৪)।